পাপী

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

ওয়াহিদ মামুন লাভলু
  • ১২
  • ২৭
পরীক্ষা শেষ করে প্রিয়জনদের সাথে কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য বাড়ি গেল রাহাত।

একদিন সকালে রাহাত জানালা দিয়ে দেখলো কালো পোশাক পরিহিতা, খুব ফর্শা, স্লীম ফিগারের লম্বা, সিল্কি চুলওয়ালা একজন অচেনা মেয়ে অন্য ঘরের বারান্দায় তার ভাতিজাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। তাকে দেখে মনের মধ্যে ঝড় বয়ে গেল।

পরে রাহাত জানলো, সে তার ভাবির ফুপাতো বোন। নাম রুবী। তাদের বাড়ি বেড়াতে এসেছে।

একসময় রুবীর সাথে তার আলাপ-পরিচয় হলো। সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ওরা তিন বোন এক ভাই। রুবীই সকলের বড়। ভাইটি সবার ছোট।

রাতে ভাবি, রুবী আর রাহাত ভাবির ঘরে গল্প করার সময় বিয়ে-শাদির কথা উঠলে ভাবি রাহাতকে বললেন, আজ আমাদের সাথে গল্প করছো। আর বিয়ের পর কারো কথা মনেই থাকবে না। তখন শুধু বৌকে নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাবে।
রাহাত বললো, আমরা ছেলেরা কি আর চাকরি-বাকরি না পেলে বিয়ে করতে পারি? আপনারা এক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। যেমন রুবী এখন ইচ্ছে করলেই বিয়ে করতে পারে।
রাহাতের মুখ থেকে রুবীর কথা বের হওয়ায় ভাবি চমকে উঠে চট করে রাহাতের মুখের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছো, পাশ করে চাকরি তো অবশ্যই পাবে।

এরপর রাহাতের ভাই ঘরে প্রবেশ করায় গল্প বন্ধ হয়ে গেল।

কয়েকদিন পর রাহাতের ভাই রুবীকে তাদের বাড়িতে রেখে এলেন। রাহাতও ঢাকা চলে গেল। কিছুদিন পর ঢাকায় বেসরকারি চাকরিতে জয়েন করলো।

দুই মাস পর পাবনায় রাহাত তাদের বাড়িতে গেলে তার ভাবি বললেন, আমার ফুপাতো বোন রুবীকে তো তুমি দেখেছ। তোমার যদি পছন্দ হয় তবে তার সঙ্গে তোমার বিয়ের ব্যাপারে বাড়িতে কথা বলবো।
রাহাত আনন্দিত হয়ে বললো, আমার খুবই পছন্দ।

এক ঈদের সামনে রাহাতের অফিসের ঠিকানায় রুবীর পাঠানো একটা কার্ড এল। রাহাতও তাকে কার্ড পাঠালো। এরপর তাদের মধ্যে পত্র যোগাযোগ চলতে থাকল। রুবী তার ছবি পাঠালো, রাহাতও তার ছবি পাঠালো। তার ছবি স্ক্যান করে অফিসের কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ইচ্ছা হলেই রাহাত দেখে। বাসায় তার ফটো দেখে আর ভাবে, সে তার বউ হলে খুবই ভালো হবে।

রাহাতের বাবাকে রুবীর বিষয়টা জানানো হলে রুবী অল্প শিক্ষিত হওয়ার অজুহাতে তিনি কিছুতেই রাজী হলেন না।

রাহাত ভাবলো যে তার বাবাও নাকি নিজের বিয়ের সময় একজনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাহাতের দাদা তাকে বিয়ে করতে দিয়েছিলেন না। সেই ঘটনাই তার বাবার আমিত্বের ভিতরে হয়তো প্রতিশোধ স্পৃহার অদৃশ্য গোপন বীজ রোপণ করেছিল।

রাহাত আরো ভাবলো যে তার বাবা যেন বলছেন, আমি এক মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। আমার বাবা রাজী হয়েছিলেন না। অন্য মেয়েকে দেখাতে নিয়ে যাওয়ার দিন আমাকে যাতে পছন্দ না করে সেজন্য আমি গায়ে ধুলা মেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে পছন্দ করেছিল এবং আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল না। কাজেই তোমার ইচ্ছাও আমি পূরণ হতে দেব না।

রাহাতের আরেক বড় ভাই রফিকও রাজী হলেন না। তার ভাষ্য হলো, গ্রাম থেকে সহজ সরল এই অল্প শিক্ষিত বস্তাকে শহরে টেনে নিয়ে গিয়ে বাস করা যাবে না।

রাহাত চিন্তা করলো, তিনিও এক মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। বাবাকে তিনি বলেছিলেন, অমুক মেয়েটাকে অন্ততঃ একটিবার দেখা হোক।

কিন্তু সেই মেয়েকে দেখা পর্যন্ত হয়েছিল না। অবশেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে হয়েছিল। তাই রাহাত ভাবলো যে বড় ভাইও যেন বলছেন, আমি একজন মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বাবা রাজী না হওয়ায় পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে পারিনি। তোমার আশাও আমি পূরণ হতে দেব না।

এভাবে বেশ কিছুদিন নিরবে কেটে যাওয়ার পর ভাবি রাহাতকে জানালেন, ভাল চাকরি পাওয়ায় রুবীর কথা তুমি ভুলে গেছো। আমি রুবির বড় বোন। সে হিসাবে বিয়েটা হোক তা আমি ঐকান্তিকভাবে চাই। তোমার সাথে বিয়ে হলে নিষ্পাপ মেয়েটা শহরে থাকতে পারতো।

রাহাত জানালো যে রুবীর কথা সে ভুলে যায়নি। তাকে ধৈর্য ধরতে বললো যে অন্য মেয়েকে সে বিয়ে করতে রাজী না হলে একসময় বাড়ি থেকে রুবীর ব্যাপারে রাজী হবেই।

একবার রাহাত বাড়ি গিয়ে দেখলো যে ভাবি তার বাবার বাড়ি বেড়াতে গেছেন। রুবি এসএসসি পাশ করে তার ভাবির বাবার বাড়ির কাছের এক কলেজে ভর্তি হয়েছে। ভাবিদের বাড়িতেই সে থাকে। রাহাত রওনা হলো। একটা নদীর ধারে তার ভাবিদের গ্রাম। নদী পার হয়ে যেতে হয়।

রুবীর সাথে বিয়ের কথাবার্তা শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার তার সাথে দেখা হবে ভাবতেই রাহাত শিহরণ অনুভব করলো।

বাড়িতে গিয়ে রুবীর সাথে তার দেখা হলো। আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়েছে। ও একটা লাল পোশাক পরেছে। খুব আকর্ষণীয় লাগছে।

রাহাত রুবীকে কয়েকটা গানের ক্যাসেট গিফট করেছিল। পাশের রুম থেকে যখন শচীন দেব বর্মণের গানের কলি ভেসে এলো “তুমি এসেছিলে পরশু কাল কেন আসোনি” তখন রাহাতকে উদ্দেশ্য করেই রুবী গান চালিয়ে দিয়েছে বুঝতে পেরে খুব রোমাঞ্চিত হলো। ওর সাথে নিরিবিলি একটা ঘরে কথা বলার সুযোগ পেল। সে খাটের এক কোণে আর রুবি আরেক কোণে বসলো। ওর চুলগুলি আলগা। খুব সুন্দর লাগছে। কথা বলার সময় লজ্জায় ও রাহাতের দিকে ভালো করে তাকাতে পারছে না।

বিদায় নেওয়ার সময় এগিয়ে দিতে এসে ভাবিদের বাড়ির ফুলগাছ থেকে একটা লাল গোলাপ ছিঁড়ে রুবি রাহাতকে উপহার দিল।

ভাবি, রুবী আর রাহাত একসাথে নদীর ধার পর্যন্ত গেল। নৌকায় উঠে রাহাত রুবীর দিকে তাকিয়ে অভিভুত হয়ে গেল। লম্বা গড়নের রুবীকে খুব সুন্দর লাগছিল। নদী পার হয়ে রাহাত দেখলো তখনও রুবী আর ভাবি নদীর ওপারে দাঁড়িয়ে আছেন।

ঢাকায় চলে আসার কিছুদিন পর রুবীর চিঠি পেল। জানিয়েছে যে কাশেম নামের একজন তাকে পছন্দ করেছে, সে তাকে বিয়ে করতে চায়। রাহাতের বাড়ি থেকে যে রাজী হচ্ছে না তা রুবী শুনেছিল। তাই লিখেছে, আমি কি এমন অপরাধ করেছিলাম?

আরো লিখেছে, ফাল্গুন মাসের মধ্যে আপনি যদি আমাকে বিয়ে না করেন তবে কাশেম নামের লোকটাই কিন্তু আমাকে বিয়ে করবে।

রাহাত সবাইকে রাজী করার অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু কেউ রাজীই হলেন না। আর সবেমাত্র চাকরিতে জয়েন করে কারো অমতে বিয়ে করার মতো সাহসীও রাহাত হয়ে উঠতে পারলো না। তাছাড়া সামাজিকতার কারণে রুবীর বাবা-মা রাহাতের বাবা-মায়ের অমতে বিয়েতে রাজী না।

ফাল্গুন মাস পার হয়ে গেল।

মিরপুর বার নাম্বার-এ পাশের বাড়ির বন্ধু জাহাঙ্গীর আর রাহাত মেসে থাকে। জাহাঙ্গীর একটা কাজে বাড়ি থেকে ঘুরে এলো। রাহাত রাতে রুবীর কাছে চিঠি লিখতে বসলো। জাহাঙ্গীর এ কথা ও কথা বলে রাহাতকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে চাইলো। অনেক বলার পরও রাহাত গেল না। চিঠিই লিখলো। পরদিন চিঠিটা পাঠানোর পূর্বে জাহাঙ্গীর রাহাতকে বললো, রুবীর যদি অন্যের সাথে বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তুই কি খুব কষ্ট পাবি?
রাহাত বললো, এ কথা কেন বলছিস?
জাহাঙ্গীর বললো, রুবির বিয়ে হয়ে গেছে। তুই মন খারাপ করিস না। ধরে নে যে রুবীর সাথে বিয়ে তোর ভাগ্যে লেখা ছিল না।

খবরটি শুনে রাহাত স্তব্ধ হয়ে গেল। রুবী রাহাতকে তাড়া দিয়েছিল যে ফাল্গুন মাসের মধ্যে সে যেন তাকে বিয়ে করে। কিন্তু রাহাত পারলো না।

বাড়ি গিয়ে সে ভাবিকে বললো, রুবীর বিয়ের ব্যাপারটা আমাকে আগে থেকে একটু জানালেন না কেন?
তিনি একটু ভারাক্রান্ত ও কড়া কন্ঠে বললেন, কি আর জানাবো!

রাহাতের মনে পড়লো যে ভাবি তার এক চাচাতো ভাইয়ের অভিভাবকদের অমতে নিজে নিজে বিয়ে করার কাহিনী শুনিয়েছিলেন। এবার রাহাত বুঝলো যে ভাবি চেয়েছিলেন, সে তার বাবা-মার অমতে হলেও রুবীকেই যেন বিয়ে করে। কিন্তু সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে ইঙ্গিতে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাহাত তখন তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছিল না।

বছরখানেক কেটে যাওয়ার পর অবশেষে বাবার পছন্দ করা মেয়েকে রাহাত বিয়ে করতে বাধ্য হলো।

তারপর দশ বছর কেটে গেছে। নদীর ধারে রুবীর সাথে বিদায়ের পর এই দশ বছরে তার সাথে রাহাতের আর দেখা হয়নি।

কিন্তু এই সময়ের মধ্যে রাহাতদের পরিবারে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। তার রফিক ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে তার বণিবনা না হওয়ায় তারা এখন আলাদা থাকছে। আর রাহাতের স্ত্রীর সাথে তার মনের মিল না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তাদের দুইজনের এই দূরবস্থার কারণ কিছুতেই খুঁজে পায় না রাহাত।

ঠিক এই সময় একদিন রাহাতের মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এল। রিসিভ করতেই সরল কণ্ঠে এক মেয়ে জানতে চাইলো, কোথায় এটা?
রাহাত বললো, ফোনটা তো আপনিই করেছেন। কাজেই কোথায় এটা তা তো আপনার জানা থাকারই কথা।
মেয়েটি আবার বললো, প্লিজ, বলুন না, কোথায় এটা?
রাহাত জানালো, এটা খুলনা।
সে ধীর স্বরে বলল, বোধহয় রং নাম্বার।

কয়েকদিন পর সেই নাম্বার থেকে আবার ফোন এল। জানতে চাইলো, আপনি কি রাহাত ভাই?
রাহাত বললো, হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
ভারাক্রান্ত কণ্ঠে মেয়েটি বললো, দশ বছর আগে আপনার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল। আমাকে কি চিনতে পারবেন?
রাহাত জানতে চাইলো, বলুন, দেখি চিনতে পারি কিনা।
সে বললো, আমি রুবী। চিনতে পেরেছেন?
কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল রাহাত। তারপর হেসে বললো, একি বলছো রুবী, তোমাকে চিনতে পারবো না?
রুবী বললো, চিনতে পেরেছেন জেনে খুশী হলাম। কয়েকদিন আগেও ফোন করেছিলাম। কিন্তু আপনি মাইন্ড করবেন ভেবে পরিচয় দিইনি।
রাহাত বললো, আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
রুবী বললো, লাবনী আপা, মানে আপনার ভাবি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তার মোবাইল থেকে নাম্বারটা নিয়েছি। অনেকদিন তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তাই ভাবলাম যে আমার ভাইটা কেমন আছে সে ব্যাপারে একটু খোঁজখবর নিই। আপনি কি কিছু মনে করেছেন?
রাহাত বললো, না না, কিছু মনে করিনি। বরং আমি যা করতে পারিনি তুমি তা করেছো বলে খুব খুশী হয়েছি।

রুবীর কাছ থেকে রাহাত জানতে পারলো, তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের খৎনার সময় রাহাতকে যাওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করলো। কিন্তু রুবীর মঙ্গলের কথা ভেবে রাহাত গেল না।

একদিন রুবী বললো, আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
রাহাত বললো, অসুস্থ হয়ে পড়ো মানে?
রুবী বললো, আমি হালকা-পাতলা হওয়ায় বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে বেশি করে খাওয়া-দাওয়া করতে বলতো। তাই এখন ওজন অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডায়াবেটিস হয়েছে। আগে আমার খুব মন খারাপ থাকতো এবং মাথা ব্যাথা করতো। কিন্তু এখন আপনার সঙ্গে কথা বলার পর আমার মাথাটা একেবারে পরিস্কার হয়ে যায়।

কথায় কথায় রাহাত একদিন বললো, তোমার বিয়ের পূর্বে আমি তো অপেক্ষায় ছিলাম যে আমাদের বাড়ি থেকে হয়তো একসময় সবাই রাজী হবে। এদিকে আমার অজান্তেই তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আমি খবরটা জেনেছিলাম তোমার বিয়ের পর।
রুবী বললো, আমি তো আপনাকে আগেই জানিয়েছিলাম।

রুবী অহংকার না করে কথাটা স্বীকার করলো বলে রাহাত খুব অবাক হলো। ভাবলো, রুবী তাহলে চেয়েছিল, রুবী যে ফাল্গুন মাসের কথা জানিয়েছিল সেই মাসের পূর্বে রাহাত যেন কাশেম নামের লোকটার হাত থেকে তাকে বাঁচায়। রাহাতের মধ্যে অপরাধবোধ জেগে উঠলো।

রাহাত বললো, আমার বোঝা উচিৎ ছিল যে আমরা যদি নিজে নিজেই বিয়ে করে ফেলতাম তাহলে পরবর্তীতে ঠিকই বাড়ির সকলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যেত।
রুবী একটু দৃঢ় কন্ঠে বললো, বিয়ে করে ফেললে সবকিছু পরে আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যায়।
সে আবার বললো, ঐ সময় আমার নানান জায়গা থেকে বিয়ের সম্বদ্ধ আসছিল। আমার বাবা বলতেন যে যত টাকা লাগুক আপনার সাথেই আমার বিয়ে দেবেন। তাই বিয়ের আগে যখনই তিনি শুনতেন যে আমার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে লোক আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তখনই তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে মন খারাপ করে এক জায়গায় বসে থাকতেন। তারা আমার বাবার মুখোমুখি হতেই পারতো না। কিন্তু বিয়ের আগেরদিন রাত দশটার সময় সবাই এসে হাজির হয়ে সারারাত ধরে অনেক বোঝানোর পর আমাদের বাড়ি থেকে রাজী হয়েছিল। তখন আমার বয়স কম থাকায় জোর দিয়ে বাবা-মাকে বলতে পারিনি যে আমার বিয়ে করতে দেরী আছে। আর সে সময় তো মোবাইলের প্রচলন ছিল না। তাই দ্রুত কোন সংবাদ পাঠানো যেত না। বিয়ের পর আমি তো খুব ছটফট করতাম।

রুবীর কাছ থেকে এসব শোনার পর ভীষণ অবাক হয়ে রফিক ভাইয়ের এবং নিজের দূরবস্থার কারণ রাহাত খুঁজে পেল বলে মনে হলো।

গ্রামের এক নিষ্পাপ মেয়ে দশ বছর পূর্বে অতদূর থেকে তাকে একটা ইচ্ছার কথা এবং অন্য কাউকে বিয়ে করার ব্যাপারে তার অনিচ্ছার কথা চিঠিতে জানিয়েছিল।

শুধু তাই নয়। এক সরল পিতা অন্য একজনের সাথে তার আদরের বড় সন্তানটির বিয়ের আলোচনা এড়ানোর জন্য তাকে যাতে কেউ খুঁজে না পায় সেজন্যে বাড়ির বাইরে গিয়ে বসে থাকতেন।

রাহাতের অভিভাবকদের আমিত্বের একগুঁয়েমি এক পিতাকে ঠেলে দিয়েছিল তার বড় মেয়েটিকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একজনের হাতে তুলে দেওয়ার পথে আর এক সরলা মেয়েকে বাধ্য করেছিল অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিজেকে একজনের হাতে সঁপে দিতে।

রাহাত জানে যে দশ বছর পর রুবী তার সাথে যোগাযোগ করেছে খারাপ কোন উদ্দেশ্যে নয়। তার স্বামী, সন্তান তার হৃদয়ে আছে। কিন্তু রাহাতের জন্যও একটা স্থান তার হৃদয়ে এখনও হয়তো আছে যা শত যুক্তির শাসন দিয়েও সে বন্ধ করতে পারেনি, ভালোবাসার অনুভুতি থাকা বয়স পর্যন্ত কোন মানুষ তা পারে না। দুইজন মানুষকে হৃদয়ে রাখার দোষে রুবীকে দোষী করেছে তো জ্ঞান বুদ্ধিওয়ালা পরিপক্ক মানুষজন যারা জানে যে ধর্মেও বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবে হবু বর কনের পছন্দের গুরুত্ব আছে, কিন্তু তারা “আমিত্বের” বাইরে গিয়ে তা বাস্তবে মানতে পারে নি। কিন্তু রাহাত অত জ্ঞান বুদ্ধিওয়ালা মানুষ না হলেও এক কাশেম ভাইয়ের কষ্টের কারণ না হওয়ার মতো জ্ঞান তার আছে এবং সে তা সারাজীবন মেনে চলবে।

রুবী গ্রামের একজন অবলা মেয়ে হয়ে নিজের ইচ্ছা পূরণ না হওয়া নিরবে সহ্য করেছিল, কারো বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেনি। কিন্তু তার কষ্ট আল্লাহ্‌ দেখেছেন। হতে পারে যে রুবীর চাওয়াটা সঠিক ছিল। তাই তার বিয়ের পর তার কষ্টটাই হয়তো একটু একটু করে নেমে এসে এই দশ বছর পর রাহাতদের উপরে চরম আঘাত হেনেছে। আর সেই আঘাতেই হয়তো তাদের জীবনে নেমে এসেছে দূরবস্থা যার বীজ তারা নিজেরাই বপন করেছিল।

আমিত্বের সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে রাহাতের বাবা এবং তার রফিক ভাই যদি নিজেদের বিয়ের ইচ্ছা পূরণ না হওয়া সম্পর্কিত বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে রাহাত এবং রুবীর বিয়েতে মত দিতেন তাহলে হয়তো সবকিছুই আজ অন্যরকমভাবে ঘটতো।

রাহাত এতদিন রুবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু এখন ইচ্ছা জাগলেই তারা কথা বলে। রাহাতও খেয়াল করেছে যে রুবীর কণ্ঠ শুনলে তার কোনো মানসিক চাপ থাকে না।

একজন পুরুষের কাছে একজন মেয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তেমনি একজন মেয়ের কাছে পুরুষ। কিন্তু সব ফুল যেমন সবার প্রিয় হয় না, তেমনি সব মানুষ সবার কাছে প্রিয় হয় না। যে মেয়েকে একজন পুরুষ ভালোবাসে, সেই মেয়ের এক চিলতে হাসির বিকল্প জগতের অন্য কোনো কিছুই তার কাছে হয়ে উঠতে পারে না। মানুষের মনের এই টানকে বাধা দিলে বোধ হয় প্রাণশক্তিই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন নানা শারীরিক সমস্যাও হতে পারে।

ওরা ভাবে যে ওদের এই কথা বলা অবশ্যই একটা পাপ। কিন্তু রুবী নামের এক মেয়ে রাহাতকে ভালোবাসে, এটা রাহাতের ভিতরে একটা শক্তি জোগায়, অনুরূপভাবে রুবীর ভিতরেও। তাছাড়া জীবনে স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষের সঙ্গে রুবীর এবং অন্য মেয়ের সঙ্গে রাহাতের কথা তো হবেই। আর এই কথা বলার কারণে হয়তো তারা কয়েকটা দিন হলেও বেশি বাঁচবে। একবার বিদায় নিলে তো আর এখানে ফিরে আসা যাবে না। অনেক অপরাধ তো তারা করছেই। তাই এ অপরাধটুকুও না হয় করে যাবে।

তাছাড়া প্রেম তো অন্তরের বিষয় যা আত্মার সাথে মিশে থাকে। আত্মাই মানুষকে চালিত করে। তাই প্রেমকে অস্বীকার করলে তো নিজেকেই অস্বীকার করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। আর যারা প্রেমকে দমিয়ে রেখে বেঁচে থাকে তারা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকে।

রুবীর স্বামীও রাহাতের সাথে রুবীর বিয়ের কথাবার্তার কথা আগে থেকে জানত। কাজেই রাহাতের বাবা এবং বড় ভাইয়ের মতো সেও তো শুধু তার আমিত্বের সুখের কথাই ভেবেছিল। কিন্তু রাহাত আর রুবীর ভিতরেও যে তাদের আমিত্ব বাস করে এটা সে তখন ভাবেনি কেন?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আমার শ্রদ্ধা জানবেন।
মিলন বনিক একসাথে বেড়ে উঠা প্রেম বিরহ....ভালই লাগলো গল্পটা....শুভ কামনা....
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি অনেক সুন্দর একটা গল্প পড়লাম..........ধন্যবাদ ওয়াহিদ ভাই............
আপনার মন্তব্যে খুব অনুপ্রাণিত হলাম। অশেষ ধন্যবাদ। সালাম জানবেন।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি.
অশেষ ধন্যবাদ। শ্রদ্ধা জানবেন। ভাল থাকবেন।
মোজাম্মেল কবির শুভ কামনা রইলো... গল্প ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে। আমার শ্রদ্ধা জানবেন।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর ও মানসম্মত একটি লেখা ।।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আমার শ্রদ্ধা জানবেন। ভাল থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন দাদা আপনার এ গল্প বাংলাদেশ খবর অনলাইল পত্রিকার সাহিত্যপাতায় প্রকাশ হয়েছে http://www.bangladeshkhobor.com
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ভাই। আমার কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা এবং সালাম জানবেন।
Rumana Sobhan Porag ওয়াহিদ ভাই খুব পরিচ্ছন্ন একটি গল্প লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল
আপনার মন্তব্যে খুব অনুপ্রাণিত হলাম। অশেষ ধন্যবাদ। সালাম জানবেন।
মাসুম বাদল বেশ ভালো লেগেছে। শুভকামনা ...
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরি আছে। তবে সেটাকে মেনে নিয়ে সঠিক আচরণ করাটাই খাটি মানুষের কাজ। আপনি সেটা ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাল লিখেছেন ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
ভাল লাগা জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। সালাম জানবেন।

১৮ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪